আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার :: করোনা সতর্কতায় গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনা সংক্রমণে দেশের চতুর্থ শীর্ষ জেলায় পরিণত হওয়া কক্সবাজার শহরের দোকানপাট দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস পর খুলেছে ১ জুলাই থেকে। তবে এখনও খুলে দেওয়া হয়নি পর্যটন কেন্দ্রগুলো। ফলে কক্সবাজার শহরসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহে অবস্থিত ৭ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও সহস্রাধিক রেস্তোরাঁর হাজার হাজার মালিক-শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বেকার হয়ে রয়েছে হাজার হাজার শ্রমিকও। হোটেল মালিক-কর্মচারী ও পরিবহণ শ্রমিকরা তাদের জীবিকা রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে হলেও হোটেল-মোটেল ও সমুদ্র সৈকত খুলে দেওয়ার দাবী জানান।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ থেকেই কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশপাশি সমুদ্র সৈকতেও মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ কক্সবাজারে প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হয় এবং এদিন থেকে কক্সবাজার জেলাকে অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে গত ৫ জুন কক্সবাজার শহরকে দেশের প্রথম ‘রেডজোন’ ঘোষণা করে পরদিন ৬ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত পক্ষকালের লকডাউন জারি করা হয়। পরে এ লকডাউনের সময়সীমা আরো দশদিন বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কার্যত তখন থেকেই কক্সবাজারের অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে এবং লোকজন ঘরবন্দী রয়েছে। স¤প্রতি ‘রেডজোন’ চিহ্নিত দেশের কয়েকটি জেলায় আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার, যারমধ্যে কক্সবাজারও রয়েছে। এরই মাঝে দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস পর গত ১ জুলাই থেকে পর্যটন শহরের ছোট বড় সব মার্কেট খুলেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে ব্যবসা বাণিজ্য।
তবে এখনও খুলে দেওয়া হয়নি কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। ফলে কক্সবাজার শহরের চার শতাধিকসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহে অবস্থিত ৭ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও সহস্রাধিক রেস্তোরাঁর অন্তত ৩০ হাজার মালিক-শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হোটেল মালিক-কর্মচারীদের জীবিকা রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে হলেও হোটেল-মোটেল ও সমুদ্র সৈকত খুলে দেওয়ার দাবী জানায় ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখা।
শাখার সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার বলেন- করোনা লকডাউনের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প দৈনিক ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত ২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে গেছে। পাশাপাশি ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোন রকমে বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে।
আবুল কাশেম সিকদার বলেন- এ পরিস্থিতিতে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসায়ীদের সুদমুক্ত ঋণ দেয়া ও বেকার হওয়া কর্মচারীদের রেশনভুক্ত করার জন্য আমরা গত কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেছি।
তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন- এখনো পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্র ও পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে হোটেল মোটেল মালিকদের জন্য কোন ধরনের প্রণোদনা পাওয়া গেলে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের মাঝে যথাযথভাবে বিতরণ করা হবে।
এদিকে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলের পাশাপাশি গণপরিবহণও খুলে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন জানিয়েছে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে সারা দেশে গণপরিবহন চললেও কক্সবাজার জেলার চলছে না। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে কক্সবাজার আন্তঃ জেলার পরিবহন সেক্টর।
কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিকগ্রæপের সহ-সভাপতি আবদুল মাবুদ কোম্পানী বলেন, আমরা কক্সবাজার আন্তঃ জেলায় দীর্ঘ ৭০ বছর যাবৎ যাত্রী পরিবহন করে আসছি। কিন্তু দীর্ঘ তিনমাস ধরে আন্তঃ জেলা সড়কে যাত্রী পরিবহণ বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম ও ঢাকা হতে বিভিন্ন সার্ভিসের বেশকিছু গাড়ী কক্সবাজার বিআরটিএ এর অনুমতি ছাড়া কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত চলাচল করছে। অথচ উখিয়া টেকনাফে সড়কে চলাচলকারী স্থানীয় মিনিবাস গুলো বাধার কারণে চলাচল করতে পারছে না।
তিনি বলেন, কক্সবাজার-টেকনাফ ও কক্সবাজার-চকরিয়া সড়কে স্বাস্থ্য বিধি মেনে আমাদের বাস গুলো চলাচলের অনুমতি দিন।
পাঠকের মতামত: